ইয়ারমিয়া 48

মোয়াবের বিষয়ে

1মোয়াব সম্বন্ধে ইসরাইলের মাবুদ আল্লাহ্‌রাব্বুল আলামীন বলছেন, “হায় নবো! ওটা তো ধ্বংস হয়ে যাবে। কিরিয়াথয়িম অসম্মানিত হয়ে অন্যদের হাতে চলে যাবে; তার কেল্লা অপমানিত হয়ে চুরমার হয়ে যাবে। 2মোয়াবকে আর প্রশংসা করা হবে না; তার পতনের জন্য লোকে হিশ্‌বোনে ষড়যন্ত্র করে বলবে, ‘এস, আমরা ঐ জাতিকে শেষ করে দিই।’ হে মদ্‌মেনা, তোমাকেও ধ্বংস করা হবে; তলোয়ার তোমার পিছনে তাড়া করবে। 3হোরোণয়িম থেকে কান্নার শব্দ শোন, ধ্বংস ও বিনাশের কান্না। 4মোয়াবকে ভেংগে ফেলা হবে; তার ছোট ছেলেমেয়েরা কেঁদে উঠবে। 5লূহীতের পথে উঠে যাবার সময় লোকে খুব কাঁদতে কাঁদতে যাবে; যে রাস্তা হোরোণয়িমের দিকে নেমে গেছে সেখানে ধ্বংসের জন্য দারুণ মনোকষ্টের কান্না শোনা যাবে। 6পালাও, নিজের নিজের প্রাণ নিয়ে দৌড়াও; মরুভূমির ঝোপের মত হও। 7তুমি যখন তোমার কাজ ও ধনের উপর ভরসা করছ তখন তোমাকেও বন্দী করে নিয়ে যাওয়া হবে, আর কমোশ তার ইমাম ও রাজকর্মচারীদের সংগে বন্দী হয়ে দূরে যাবে। 8প্রত্যেকটি শহরের বিরুদ্ধে ধ্বংসকারী আসবে এবং কোন শহরই এড়িয়ে যেতে পারবে না। আমার কথামত উপত্যকা ধ্বংস হবে এবং সমভূমির বিনাশ হবে। 9মোয়াবকে ডানা দাও যেন সে উড়ে পালিয়ে যেতে পারে; তার শহরগুলো জনশূন্য হবে, সেখানে কেউ বাস করবে না।”

10মাবুদ বলছেন, “আমার কাজে যে লোক ঢিলেমি করে তার উপর বদদোয়া পড়ুক। যে তার তলোয়ারকে রক্তপাত করতে দেয় না তার উপরে বদদোয়া পড়ুক।

11“এক কলসী থেকে অন্য কলসীতে ঢালা না হলে মদানো রস যেমন তার গাদের উপর পড়ে থাকে তেমনি করে মোয়াব তার ছোটবেলা থেকে নিশ্চিন্তে পড়ে আছে; সে বন্দীদশায় যায় নি। তাই তার স্বাদ আগের মতই রয়েছে, তার সুগন্ধের পরিবর্তন হয় নি। 12কিন্তু দিন আসছে যখন আমি কলসী থেকে ঢালবার লোকদের পাঠিয়ে দেব, আর তারা তাকে ঢেলে বের করবে; তারা তার কলসীগুলো খালি করবে এবং তার পাত্রগুলো চুরমার করে দেবে। 13ইসরাইলের লোকেরা যেমন বেথেলের উপর বিশ্বাস করে লজ্জিত হয়েছিল তেমনি মোয়াবও কমোশের বিষয়ে লজ্জিত হবে।

14“তোমরা কেমন করে বলতে পার, ‘আমরা যোদ্ধা, যুদ্ধে সাহসী লোক’? 15মোয়াব ধ্বংস হবে এবং তার শহরগুলো আক্রমণ করা হবে; তার সেরা সেরা যুবকেরা জবাই করবার জায়গায় নেমে যাবে।” যাঁর নাম আল্লাহ্‌রাব্বুল আলামীন সেই বাদশাহ্‌এই কথা বলছেন, 16“মোয়াবের পতন এসে গেছে; তার বিপদ তাড়াতাড়ি আসবে। 17তোমরা যারা তার চারপাশে বাস কর, যারা তার সুনামের কথা জান, তোমরা সবাই তার জন্য বিলাপ কর। তাকে বল, ‘শক্তিশালী রাজদণ্ড, গৌরবময় লাঠি কেমন ভেংগে গেছে!’ ”

18মাবুদ বলছেন, “হে দীবোনের বাসিন্দারা, তোমাদের গৌরবের জায়গা থেকে নেমে এসে শুকনা মাটির উপরে বস, কারণ মোয়াবের ধ্বংসকারী তোমাদের বিরুদ্ধে এসে তোমাদের কেল্লাগুলো ধ্বংস করে দেবে। 19হে অরোয়েরের বাসিন্দারা, তোমরা পথের পাশে দাড়িয়ে দেখ। পালিয়ে যাওয়া পুরুষ ও স্ত্রীলোককে জিজ্ঞাসা কর, ‘কি হয়েছে?’ 20মোয়াব অপমানিত হয়েছে, কারণ সে চুরমার হয়েছে। তোমরা বিলাপ কর ও কাঁদ। অর্ণোন নদীর ধারে এই কথা প্রচার কর যে, মোয়াব ধ্বংস হয়ে গেছে। 21সমভূমির এই সব জায়গায় বিচারের সময় উপস্থিত হয়েছে-হোলন, যহস, মেফাৎ, 22দীবোন, নবো, বৈৎ-দিব্লাথয়িম, 23কিরিয়াথয়িম, বৈৎ-গামূল, বৈৎ-মিয়োন, 24করিয়োৎ ও বস্রা, অর্থাৎ মোয়াব দেশের দূরের ও কাছের সমস্ত গ্রাম ও শহরগুলোর উপরে বিচারের সময় উপস্থিত হয়েছে। 25মোয়াবের শক্তির শিং কেটে ফেলা হয়েছে; তার হাত ভেংগে গেছে।

26“মোয়াবকে মাতাল কর, কারণ সে আমার বিরুদ্ধে নিজেকে বড় করে দেখিয়েছে। সে তার বমির মধ্যে গড়াগড়ি দেবে; সে হাস্তিঠাট্টার পাত্র হবে। 27হে মোয়াব, ইসরাইল কি তোমার হাস্তিঠাট্টার পাত্র ছিল না? সে কি চোরদের মধ্যে ধরা পড়েছে যে, তুমি যতবার তার কথা বল ততবার ঘৃণায় মাথা নাড়? 28ওহে মোয়াবের বাসিন্দারা, তোমরা শহর ছেড়ে পাহাড়ে গিয়ে বাস কর। তোমরা এমন কবুতরের মত হও, যে পাহাড়ের খাদের মুখে তার বাসা বাঁধে।

29“মোয়াব খুব অহংকারী। আমরা তার অহংকারের কথা, তার মিথ্যা গর্ব, তার বড়াই ও বদরাগ এবং তার দিলের গর্বের কথা জানি। 30আমি তার গর্বে ভরা অহংকারের কথা জানি, কিন্তু তা মিথ্যা এবং তার বড়াই কোন কাজের নয়। 31তাই আমি মোয়াবের জন্য বিলাপ করব, সমস্ত মোয়াবের জন্য কাঁদব, কীর-হেরেসের লোকদের জন্য কাত্‌রাব। 32হে সিব্‌মার আংগুর লতা, আমি যাসেরের জন্য যেভাবে কাঁদব তার চেয়েও বেশী কাঁদব তোমার জন্য। তোমার ডালপালাগুলো সমুদ্র পর্যন্ত ছড়িয়ে গেছে; সেগুলো যাসেরের সমুদ্র পর্যন্ত পৌঁছেছে। কিন্তু তোমার গরম কালের ফল ও আংগুরের উপর ধ্বংসকারীরা এসে পড়েছে। 33মোয়াবের ফলের বাগান, অর্থাৎ মোয়াব দেশ থেকে আনন্দ ও খুশীর ভাব চলে গেছে। আমি আংগুর মাড়াইয়ের জায়গা থেকে আংগুর-রসের স্রোত বন্ধ করেছি; আনন্দের চিৎকারের সংগে আর সেগুলো কেউ মাড়াই করে না। যদিও চেঁচামেচি আছে কিন্তু সেগুলো আনন্দের চিৎকার নয়।

34“তাদের কান্নার শব্দ হিশ্‌বোন থেকে ইলিয়ালী ও যহস পর্যন্ত, সোয়র থেকে হোরোণয়িম ও ইগ্লৎ-শলিশীয়া পর্যন্ত উঠেছে, কারণ নিম্রীমের পানিও শুকিয়ে যাচ্ছে। 35আমি মাবুদ বলছি, মোয়াবে যারা পূজার উঁচু স্থানে কোরবানী করে ও তাদের দেব-দেবীর উদ্দেশে ধূপ জ্বালায় আমি তাদের শেষ করে দেব। 36তাই মোয়াবের ও কীর-হেরেসের লোকদের জন্য আমার দিল বাঁশীর সুরের মত করে বিলাপ করছে। তারা যে ধন জমা করেছিল তা শেষ হয়ে গেছে। 37দুঃখ প্রকাশের জন্য সকলের মাথা কামানো ও দাড়ি কেটে ফেলা হয়েছে; প্রত্যেকের হাতে কাটাকুটি করা ও কোমরে ছালার চট পরানো হয়েছে। 38মোয়াবের সমস্ত বাড়ীর ছাদের উপরে ও শহর-চকে বিলাপ ছাড়া আর কিছু শোনা যায় না, কারণ যে পাত্র কেউ চায় না তেমন পাত্রের মতই আমি মোয়াবকে ভেংগে ফেলেছি। 39সে কেমন চুরমার হয়েছে! লোকে কেমন করে তার জন্য বিলাপ করছে! মোয়াব লজ্জায় কেমন করে তার পিঠ ফিরিয়েছে! মোয়াব তার চারপাশের সমস্ত লোকদের কাছে হাস্তিঠাট্টার পাত্র হয়েছে, আর তার অবস্থা দেখে সেই লোকেরা হতভম্ব হয়েছে।”

40মাবুদ বলছেন, “দেখ, একজন লোক ঈগলের মত শোঁ করে নেমে আসছে এবং মোয়াবের বিরুদ্ধে তার ডানা ছড়িয়ে দিচ্ছে। 41তার সব শহর অধিকার করে কেল্লাগুলো দখল করা হবে। সেই দিন মোয়াবের যোদ্ধাদের অন্তর প্রসব-যন্ত্রণা ভোগকারিণী স্ত্রীলোকের অন্তরের মত হবে। 42জাতি হিসাবে মোয়াবকে ধ্বংস করা হবে, কারণ সে আমার বিরুদ্ধে নিজেকে বড় করে দেখিয়েছে। 43হে মোয়াবের লোকেরা, তোমাদের জন্য ভয়, গর্ত ও ফাঁদ অপেক্ষা করে আছে। 44যে লোক ভয়ে পালাবে সে গর্তে পড়বে, যে লোক গর্ত থেকে উঠে আসবে সে ফাঁদে ধরা পড়বে; কারণ আমি মোয়াবের শাস্তির সময় ঠিক করে রেখেছি। আমি মাবুদ এই কথা বলছি।

45“হিশ্‌বোনের ছায়াতে পালিয়ে যাওয়া লোকেরা অসহায় হয়ে দাঁড়িয়ে আছে, কারণ হিশ্‌বোন থেকে আগুন ও সীহোনের মধ্য থেকে আগুনের শিখা বের হয়েছে; তা মোয়াবের কপাল ও গোলমাল করা গর্বকারীদের মাথার খুলি পুড়িয়ে দিয়েছে। 46হে মোয়াব, ঘৃণ্য তুমি! কমোশের লোকেরা ধ্বংস হয়ে গেছে; তোমার ছেলেদের দূর দেশে বন্দী হিসাবে নিয়ে যাওয়া হয়েছে আর তোমার মেয়েদের বন্দী করা হয়েছে। 47কিন্তু ভবিষ্যতে আমি মোয়াবের অবস্থা ফিরাব। আমি মাবুদ এই কথা বলছি।”

মোয়াবের বিচারের কথা এখানে শেষ হয়েছে।