পয়দায়েশ 49

ছেলেদের প্রতি হযরত ইয়াকুব (আঃ)-এর শেষ দোয়া

1পরে ইয়াকুব তাঁর ছেলেদের ডেকে বললেন, “তোমরা সবাই আমার কাছে এস। ভবিষ্যতে তোমাদের জীবনে যা ঘটবে তা আমি তোমাদের বলে যাচ্ছি।

2“ইয়াকুবের ছেলেরা, তোমরা সবাই আমার কাছে এস;
তোমাদের পিতা ইসরাইল কি বলছেন তা শোন।
3“রূবেণ, তুমি আমার বড় ছেলে;
তুমি আমার বল, আমার যৌবনের শক্তির প্রথম ফল;
তুমি সম্মান ও শক্তিতে তোমার ভাইদের সবার উপরে।
4কিন্তু তুমি যেন অশান্ত পানির মাতামাতি,
সেইজন্য তোমার সেই উঁচু স্থান আর থাকবে না।
আমার স্ত্রীর কাছে গিয়ে
তুমি আমার বিছানা অপবিত্র করেছ।
5“শিমিয়োন আর লেবি দুই ভাই;
তারা অনিষ্ট করবার জন্যই তলোয়ার ধরে।
6তাদের গোপন ষড়যন্ত্রে আমার কোন অংশ নেই,
আমি তাদের দলে নই।
তারা রাগের বশে মানুষ খুন করেছে,
আর নিজেদের খেয়াল-খুশী মত
গরুর পায়ের শিরা কেটে দিয়েছে।
7তাদের এই ভয়ংকর রাগ,
এই নিষ্ঠুর ক্রোধের উপর বদদোয়া পড়ুক।
আমি তাদের গোষ্ঠী ইয়াকুবের বংশগুলোর মধ্যে
ভাগ করে দেব,
আর ইসরাইলীয়দের মধ্যে তাদের ছড়িয়ে দেব।
8“এহুদা, তোমার ভাইয়েরা তোমার প্রশংসা করবে।
শত্রুদের ঘাড় ধরে তুমি তাদের জব্দ করবে;
তোমার ভাইয়েরা মাটিতে উবুড় হয়ে তোমাকে সম্মান দেখাবে।
9এহুদা, তুমি সিংহের বাচ্চা;
শিকারের গোশ্‌ত খাওয়া শেষ করে
আমার এই ছেলে উঠে আসে;
সিংহ ও সিংহীর মত করে সে বসে আর শুয়ে পড়ে।
কে তাকে জাগাবে?
10যতদিন না শীলো আসেন
এবং সমস্ত জাতি তাঁর হুকুম মেনে চলে,
ততদিন রাজদণ্ড এহুদারই বংশে থাকবে;
আর তার দু’হাঁটুর মাঝখানে থাকবে বিচার দণ্ড।
11এহুদা আংগুর গাছে তার গাধা বাঁধবে,
আর আংগুরের সেরা ডালে বাঁধবে গাধার বাচ্চাটা।
আংগুর-রসে সে তার কাপড় কাচবে,
আর আংগুরের রাংগা রসে কাচবে পোশাক।
12তার চোখের রং আংগুর-রসের রংয়ের চেয়েও গাঢ় হবে,
আর তার দাঁত দুধের চেয়েও সাদা হবে।
13“সবূলূন সাগরের ধারে বাস করবে;
সে জাহাজ ভিড়বার বন্দর হবে;
তার দেশের সীমানা সিডনের দিকে চলে যাবে।
14“ইষাখর যেন একটা শক্তিশালী গাধা।
তার শোবার জায়গা হবে ভেড়ার খোঁয়াড় দু’টার মাঝখানে।
15সে দেখবে তার বিশ্রামের দেশটা সুন্দর ও আরামের,
তাই বোঝা বইবার জন্য সে কাঁধ নীচু করবে
আর গোলামের মত কঠিন পরিশ্রমকেও মেনে নেবে।
16“দান ইসরাইলের একটা গোষ্ঠী হিসাবে
তার লোকদের বিচার করবে।
17সে হবে চলার পথের সাপ, ভয়ংকর বিষাক্ত সাপ;
সে ঘোড়ার পায়ে ছোবল মারবে,
আর ঘোড়সওয়ার উল্টে পিছন দিকে পড়ে যাবে।
18“হে মাবুদ, তুমি উদ্ধার করবে
আমি সেই অপেক্ষায় আছি।
19“গাদকে সৈন্যের দল হামলা করবে,
কিন্তু সে-ও তাদের পাল্টা হামলা করবে।
20“আশেরের জমিতে প্রচুর পরিমাণে ভাল ফসল জন্মাবে;
সে বাদশাহ্‌র উপযুক্ত খাবার যোগান দেবে।
21“নপ্তালি যেন বাঁধন-ছাড়া হরিণী;
তার মুখে আছে সুন্দর সুন্দর কথা।
22“ইউসুফ যেন ফলে ভরা গাছ,
পানির কিনারার ফলে ভরা গাছ;
তার ডালগুলো দেয়াল ছাড়িয়ে গেছে।
23ধনুকধারীরা তাকে ভীষণভাবে হামলা করেছে,
তীর ছুঁড়ে তাকে বিপদে ফেলেছে।
24কিন্তু তার ধনুক তেমনি স্থির রয়েছে
আর হাত রয়েছে তেমনি পটু,
কারণ ইয়াকুবের সেই শক্তিশালী আল্লাহ্‌র হাত তার পিছনে রয়েছে।
তার পিছনে রয়েছে সেই পালক,
ইসরাইলের সেই পাথর।
25তোমার বাবার আল্লাহ্‌তোমাকে সাহায্য করবেন।
সর্বশক্তিমান আল্লাহ্‌তোমাকে উপর থেকে আসমানের দোয়া
আর মাটির তলা থেকে ঝর্ণার দোয়া দেবেন।
স্ত্রীর গর্ভে সন্তান দিয়ে
আর তার বুকে দুধ দিয়ে
তিনি তোমাকে দোয়া করবেন।
26তোমার বাবার পাওয়া দোয়া
তার পূর্বপুরুষদের পাওয়া দোয়াকে ছাড়িয়ে গেছে;
তা অনেক কাল আগের পাহাড় পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছেছে।
সেই দোয়া ইউসুফের মাথার উপর পড়ুক;
পড়ুক তারই মাথায় যে তার ভাইদের মধ্যে প্রধান।
27“বিন্‌ইয়ামীন যেন একটা হিংস্র নেকড়ে বাঘ;
সকালে সে খায় শিকারের পশু
আর সন্ধ্যায় লুটের জিনিস ভাগ করে।”

28এরাই হল ইসরাইলের বারোটি গোষ্ঠী। তাদের পিতা তাদের দোয়া করবার সময় এই সব কথাই বলেছিলেন। তিনি প্রত্যেককেই তার পাওনা দোয়া দিয়েছিলেন।

হযরত ইয়াকুব (আঃ)-এর ইন্তেকাল

29পরে ইয়াকুব তাঁর ছেলেদের এই নির্দেশ দিলেন, “পূর্বপুরুষদের কাছে চলে যাবার সময় আমার এসে গেছে। হিট্টীয় ইফ্রোণের জমিতে যে গুহা আছে সেই গুহাতে আমার পূর্বপুরুষদের মধ্যে আমাকে দাফন কোরো। 30এটাই কেনান দেশের মম্রির কাছে মক্‌পেলার জমির সেই গুহা। কবরস্থান করবার জন্য ইব্রাহিম জমি সুদ্ধ এই গুহা হিট্টীয় ইফ্রোণের কাছ থেকে কিনে নিয়েছিলেন। 31সেখানেই ইব্রাহিম ও তাঁর স্ত্রী সারাকে দাফন করা হয়েছে। ইসহাক ও তাঁর স্ত্রী রেবেকাকেও সেখানে দাফন করা হয়েছে। সেখানেই আমি লেয়াকে দাফন করেছি। 32গুহাসুদ্ধ এই জমিটাই হিট্টীয়দের কাছ থেকে কেনা হয়েছিল।”

33ইয়াকুব তাঁর ছেলেদের নির্দেশ দেওয়া শেষ করে বিছানার উপর তাঁর পা দু’টা তুলে নিয়ে শুয়ে পড়লেন। তারপর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে তাঁর পূর্বপুরুষদের কাছে চলে গেলেন।