পয়দায়েশ 48

হযরত ইউসুফের ছেলেদের প্রতি হযরত ইয়াকুবের দোয়া

1এর কিছু দিন পরে ইউসুফ খবর পেলেন যে, তাঁর বাবা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তখন তিনি তাঁর দুই ছেলে মানশা আর আফরাহীমকে সংগে নিয়ে সেখানে গেলেন। 2যখন ইয়াকুবকে বলা হল যে, তাঁর ছেলে ইউসুফ তাঁর কাছে এসেছেন, তখন তিনি তাঁর সমস্ত শক্তি দিয়ে নিজেকে টেনে তুলে বিছানার উপর উঠে বসলেন। 3তারপর ইয়াকুব ইউসুফকে বললেন, “সর্বশক্তিমান আল্লাহ্‌কেনান দেশের লূস শহরে আমাকে দেখা দিয়ে দোয়া করেছিলেন। 4তিনি আমাকে বলেছিলেন, ‘আমি তোমাকে অনেক সন্তানের পিতা হবার ক্ষমতা দিলাম এবং তোমার বংশের লোকদের সংখ্যা বাড়িয়ে দেব। আমি তোমার মধ্য থেকে একটা বহুগোষ্ঠীর জাতি সৃষ্টি করব, আর তোমার পরে এই দেশটা আমি চিরকালের সম্পত্তি হিসাবে তোমার বংশের লোকদের দেব।’ 5আমি তোমার কাছে আসবার আগে তোমার যে দু’টি ছেলের মিসরে জন্ম হয়েছে তাদের আমার সন্তানদের মধ্যেই ধরা হবে। রূবেণ আর শিমিয়োন যেমন আমার তেমনি আফরাহীম আর মানশাও আমার। 6কিন্তু এদের পরে তোমার আর যে সব সন্তান হবে তাদের তোমার বলেই ধরা হবে। সম্পত্তির ওয়ারিশ হওয়ার সময় মানশা অথবা আফরাহীমের নামে তাদের তা হতে হবে। 7পদ্দন থেকে বের হয়ে কেনান দেশের ইফ্রাথা থেকে কিছু দূরে থাকতেই রাহেলা ইন্তেকাল করলেন, আর তাতে আমি খুব দুঃখ পেলাম। ইফ্রাথের পথে, অর্থাৎ বেথেলহেমের পথে আমি তাঁকে দাফন করলাম।”

8এর পরে ইউসুফের ছেলেদের দিকে তাকিয়ে ইসরাইল জিজ্ঞাসা করলেন, “ওরা কারা?”

9জবাবে ইউসুফ তাঁর বাবাকে বললেন, “ওরা আমার ছেলে। আল্লাহ্‌এই দেশেই ওদের আমাকে দিয়েছেন।”

ইসরাইল বললেন, “ওদের আমার কাছে নিয়ে এস। আমি ওদের দোয়া করতে চাই।”

10বুড়ো বয়সে চোখে দেখবার ক্ষমতা কমে যাওয়ায় ইসরাইল ভাল করে দেখতে পাচ্ছিলেন না। সেইজন্য ইউসুফ তাঁর ছেলেদের তাঁর বাবার কাছে নিয়ে গেলেন। তখন ইসরাইল তাদের জড়িয়ে ধরে চুম্বন করলেন। 11তিনি ইউসুফকে বললেন, “আমি আর তোমার মুখ দেখতে পাব বলে ভাবি নি, কিন্তু আল্লাহ্‌কেবল তোমাকে নয়, তোমার ছেলেদেরও আমাকে দেখতে দিলেন।”

12তখন ইউসুফ তাঁর বাবার হাঁটুর পাশ থেকে তাঁর ছেলেদের সরিয়ে দিয়ে মাটিতে উবুড় হয়ে তাঁর বাবাকে সম্মান দেখালেন। 13ইউসুফ তারপর তাঁর দুই ছেলেকে আবার ইসরাইলের কাছে আনলেন। তিনি আফরাহীমকে ডান হাতে ধরে ইসরাইলের বাঁ দিকে এবং মানশাকে বাঁ হাতে ধরে তাঁর ডান দিকে রাখলেন। 14কিন্তু ইসরাইল আড়াআড়ি ভাবে হাত বাড়িয়ে ডান হাত ইউসুফের ছোট ছেলে আফরাহীমের মাথায় রাখলেন; আর মানশা ইউসুফের বড় ছেলে হলেও তার মাথায় রাখলেন তাঁর বাঁ হাত। 15তারপর তিনি ইউসুফকে দোয়া করে বললেন,

“সেই আল্লাহ্‌, যাঁর ইচ্ছামত আমার পূর্বপুরুষ ইব্রাহিম আর ইসহাক চলতেন,
আমার জীবনের প্রথম থেকে আজ পর্যন্ত
যিনি আমাকে রাখালের মত পালন করে আসছেন,
16সেই ফেরেশতা, যিনি আমাকে সমস্ত বিপদের হাত থেকে উদ্ধার করেছেন,
তিনি এই ছেলেদের দোয়া করুন।
এদের মধ্য দিয়েই আমার ও আমার পূর্বপুরুষ
ইব্রাহিম ও ইসহাকের নাম বেঁচে থাকুক।
আমাদের দেশের মধ্যে তাদের বংশের লোকেরা
সংখ্যায় অনেক বেড়ে উঠুক।”

17-18 পিতা তাঁর ডান হাতখানা আফরাহীমের মাথার উপর রেখেছেন দেখে ইউসুফ খুশী হলেন না। তিনি তা আফরাহীমের মাথার উপর থেকে সরিয়ে মানশার মাথার উপর রাখবার উদ্দেশ্যে তাঁর বাবার হাত ধরে বললেন, “বাবা, এইভাবে নয়। এই যে আমার বড় ছেলে। তোমার ডান হাত এর মাথার উপরে রাখ।”

19কিন্তু তাঁর পিতা তাতে আপত্তি জানিয়ে বললেন, “আমি তা জানি বাবা, আমি তা জানি। সেও মহান হবে এবং তার বংশের লোকেরা একটা জাতি হয়ে গড়ে উঠবে। কিন্তু তার ছোট ভাই তার চেয়েও মহান হবে এবং তার বংশের লোকদের মধ্য থেকে অনেকগুলো জাতি গড়ে উঠবে।”

20ইসরাইল তারপর ছেলে দু’টিকে দোয়া করলেন এবং বললেন, “ইসরাইলীয়রা কাউকে দোয়া করবার সময় তোমাদের নাম করে বলবে, ‘আল্লাহ্‌তোমাকে আফরাহীম ও মানশার মত করুন।’ ” এই বলে তিনি মানশার চেয়ে আফরাহীমকে বড় স্থান দিলেন।

21তারপর ইসরাইল ইউসুফকে বললেন, “দেখ, আমার মৃত্যুর সময় প্রায় এসে গেছে। কিন্তু আল্লাহ্‌তোমাদের সংগে থাকবেন এবং তোমাদের পূর্বপুরুষদের দেশে তোমাদের ফিরিয়ে নিয়ে যাবেন। 22তোমার ভাইদের চেয়ে কিছু বেশী সম্পত্তি আমি তোমাকে দিলাম। যে জায়গাটা আমি তলোয়ার ও ধনুক দিয়ে যুদ্ধ করে আমোরীয়দের হাত থেকে নিয়ে নিয়েছিলাম সেই জায়গাটাই আমি তোমাকে দিলাম।”