২ খান্দাননামা 28
এহুদার বাদশাহ্আহস
1আহস বিশ বছর বয়সে বাদশাহ্হয়েছিলেন এবং জেরুজালেমে ষোল বছর রাজত্ব করেছিলেন। তাঁর পূর্বপুরুষ দাউদ যেমন মাবুদের চোখে যা ভাল তা করতেন তিনি তেমন করতেন না। 2তিনি ইসরাইলের বাদশাহ্দের মতই চলতেন এবং বাল দেবতার পূজা করবার জন্য তিনি ছাঁচে ঢেলে মূর্তি তৈরী করিয়েছিলেন। 3তিনি বিন্-হিন্নোম উপত্যকাতে ধূপ জ্বালাতেন এবং মাবুদ যে সব জাতিকে বনি-ইসরাইলদের সামনে থেকে দূর করে দিয়েছিলেন তাদের জঘন্য কাজের মতই তিনিও তাঁর ছেলেদের আগুনে পুড়িয়ে উৎসর্গ করলেন। 4তিনি পূজার উঁচু স্থানগুলোতে, পাহাড়ের উপরে ও প্রত্যেকটি ডালপালা ছড়ানো সবুজ গাছের নীচে পশু-উৎসর্গ করতেন ও ধূপ জ্বালাতেন।
5সেইজন্যই তাঁর মাবুদ আল্লাহ্তাঁকে সিরিয়ার বাদশাহ্র হাতে তুলে দিলেন। সিরীয়রা তাঁকে হারিয়ে দিল এবং তাঁর অনেক লোককে বন্দী করে দামেস্কে নিয়ে গেল। তাঁকেও ইসরাইলের বাদশাহ্পেকহের হাতে তুলে দেওয়া হল। ইসরাইলের বাদশাহ্তাঁর অনেক লোককে হত্যা করলেন। 6রমলিয়ের ছেলে পেকহ একদিনের মধ্যে এহুদায় এক লক্ষ বিশ হাজার সৈন্যকে হত্যা করলেন, কারণ এহুদার লোকেরা তাদের পূর্বপুরুষদের মাবুদ আল্লাহ্কে ত্যাগ করেছিল। 7সিখ্রি নামে একজন আফরাহীমীয় যোদ্ধা বাদশাহ্র ছেলে মাসেয়কে ও রাজবাড়ীর ভার-পাওয়া কর্মচারী অস্রীকামকে এবং বাদশাহ্র পরে দ্বিতীয় স্থানে যিনি ছিলেন সেই ইল্কানাকে হত্যা করল। 8বনি-ইসরাইলরা তাদের জাতি-ভাইদের মধ্য থেকে স্ত্রীলোক ও ছেলেমেয়েদের বন্দী করে নিয়ে গেল। তাদের সংখ্যা ছিল দুই লক্ষ। তারা অনেক জিনিসও লুট করে সামেরিয়াতে নিয়ে গেল।
9ওদেদ নামে মাবুদের একজন নবী সামেরিয়াতে ছিলেন। সৈন্যদল যখন সামেরিয়াতে ফিরে আসছিল তখন তিনি তাদের সংগে দেখা করে বললেন, “আপনাদের পূর্বপুরুষদের মাবুদ আল্লাহ্এহুদার উপর রাগ করেছেন বলে তিনি তাদের আপনাদের হাতে তুলে দিয়েছেন। কিন্তু রাগের চোটে আপনারা তাদের যেভাবে মেরে ফেলেছেন সেই কথা বেহেশত পর্যন্ত পৌঁছেছে। 10আর এখন আপনারা এহুদা ও জেরুজালেমের লোকদের আপনাদের গোলাম ও বাঁদী করতে চাইছেন। কিন্তু আপনাদের মাবুদ আল্লাহ্র কাছে কি আপনারাও দোষী নন? 11এখন আপনারা আমার কথা শুনুন। আপনাদের জাতি-ভাইদের মধ্য থেকে যাদের আপনারা বন্দী করে নিয়ে এসেছেন তাদের আপনারা ফেরত পাঠিয়ে দিন, কারণ মাবুদের ভয়ংকর রাগ আপনাদের উপরে রয়েছে।”
12তখন যুদ্ধ থেকে যারা ফিরে আসছিল আফরাহীমের কয়েকজন নেতা তাদের বিরুদ্ধে দাঁড়ালেন। সেই নেতারা হলেন যিহোহাননের ছেলে অসরিয়, মশিল্লেমোতের ছেলে বেরিখিয়, শল্লুমের ছেলে যিহিষ্কিয় ও হদ্লয়ের ছেলে অমাসা। 13তাঁরা বললেন, “ঐ বন্দীদের তোমরা এখানে আনবে না; আনলে আমরা মাবুদের কাছে দোষী হব। আমাদের গুনাহ্ও দোষের সংগে কি তোমরা আরও কিছু যোগ দিতে চাও? আমরা তো ভীষণভাবে দোষী হয়েই রয়েছি আর মাবুদের ভয়ংকর রাগ ইসরাইলের উপর রয়েছে।”
14তখন সৈন্যেরা সেই নেতাদের ও সমস্ত লোকদের সামনে সেই বন্দীদের ও লুটের জিনিসগুলো রাখল। 15সেই নেতারা তখন লুটের জিনিস থেকে কাপড়-চোপড় নিয়ে বন্দীদের মধ্যে যারা উলংগ ছিল তাদের সবাইকে কাপড় পরালেন। তাঁরা তাদের কাপড়-চোপড়, জুতা ও খাবার-দাবার দিলেন এবং তাদের আঘাতের উপর তেল ঢেলে দিলেন। দুর্বলদের তাঁরা গাধার উপর চড়িয়ে জেরিকোতে, অর্থাৎ খেজুর-শহরে তাদের নিজের লোকদের কাছে ফিরিয়ে নিয়ে গেলেন। পরে তাঁরা সামেরিয়াতে ফিরে আসলেন।
16সেই সময় বাদশাহ্আহস সাহায্য চাইবার জন্য আশেরিয়ার বাদশাহ্র কাছে লোক পাঠালেন। 17এর কারণ হল, ইদোমীয়রা আবার এসে এহুদা আক্রমণ করে লোকদের বন্দী করে নিয়ে গিয়েছিল। 18এদিকে আবার ফিলিস্তিনীরা তখন নীচু পাহাড়ী এলাকার গ্রামগুলোতে এবং এহুদার নেগেভে হানা দিয়েছিল। তারা বৈৎ-শেমশ, অয়ালোন, গদেরোৎ এবং আশেপাশের জায়গা সুদ্ধ সোখো, তিম্না ও গিম্সো অধিকার করে নিয়ে সেখানে বাস করছিল। 19বাদশাহ্আহসের জন্য মাবুদ এহুদাকে নীচু করেছিলেন, কারণ আহস এহুদায় খারাপী বৃদ্ধি পেতে দিয়েছিলেন এবং নিজে মাবুদের প্রতি খুব বেশী বেঈমানী করেছিলেন। 20আশেরিয়ার বাদশাহ্তিগ্লৎ-পিলেষর তাঁর কাছে এসেছিলেন কিন্তু তিনি সাহায্যের বদলে আহসকে কষ্টই দিলেন। 21তখন আহস মাবুদের ঘর ও রাজবাড়ী থেকে এবং নেতাদের কাছ থেকে কিছু দামী জিনিসপত্র নিয়ে আশেরিয়ার বাদশাহ্কে উপহার দিলেন, কিন্তু তাতে কিছুই হল না।
22তাঁর এই কষ্টের সময়ে বাদশাহ্আহস মাবুদের প্রতি আরও বেঈমানী করলেন। 23দামেস্কের দেবতারা তাঁকে হারিয়ে দিয়েছে ভেবে তিনি সেই দেবতাদের কাছে পশু-উৎসর্গ করলেন। তিনি ভাবলেন, “সিরিয়ার বাদশাহ্দের দেবতারা তাঁদের সাহায্য করে, কাজেই সাহায্য পাবার জন্য আমি সেই দেবতাদের কাছে পশু-উৎসর্গ করব।” কিন্তু সেই দেবতারাই হল তাঁর ও সমস্ত ইসরাইলের সর্বনাশের কারণ।
24আহস আল্লাহ্র ঘরের জিনিসপত্র একসংগে জড়ো করে কেটে টুকরা টুকরা করলেন। মাবুদের ঘরের দরজাগুলো তিনি বন্ধ করে দিলেন এবং জেরুজালেমের সমস্ত জায়গায় বেদী স্থাপন করলেন। 25দেব-দেবীদের উদ্দেশে ধূপ জ্বালাবার জন্য তিনি এহুদার প্রত্যেকটি শহর ও গ্রামে পূজার উঁচু স্থান তৈরী করে তাঁর পূর্বপুরুষদের মাবুদ আল্লাহ্কে রাগিয়ে তুললেন।
26আহসের অন্যান্য সমস্ত কাজের কথা এবং তাঁর সমস্ত চালচলনের কথা প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত “এহুদা ও ইসরাইলের বাদশাহ্দের ইতিহাস” নামে বইটিতে লেখা আছে। 27পরে আহস তাঁর পূর্বপুরুষদের কাছে চলে গেলেন এবং জেরুজালেম শহরে তাঁকে দাফন করা হল, কিন্তু ইসরাইলের বাদশাহ্দের কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয় নি। তাঁর জায়গায় তাঁর ছেলে হিষ্কিয় বাদশাহ্হলেন।